পুলিশ সুপার গোল্ডিকে চড় কষিয়ে ছিলেন বাল্যবিধবা ননীবালা
১৮৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন ননীবালা দেবী। ১১ বছরে বিয়ে, ১৬ বছরে বিধবা। তারপর বাবার কাছেই ফেরেন ননীবালাদেবী।
ননীবালাদেবীর ভাইপো অমর চট্টোপাধ্যায় বিপ্লবী। রিষড়ার ভাড়া বাড়িতে অমর চট্টোপাধ্যায় সহ কয়েকজন বিপ্লবীকে প্রায় দু’মাস লুকিয়ে রাখেন ননীবালা। ১৯১৫ সালের অগাস্টে রামচন্দ্র মজুমদার গ্রেফতার হন, পালিয়ে যান অমর চট্টোপাধ্যায়। রামচন্দ্রবাবু একটি মসার পিস্তল লুকিয়ে রেখেছিলেন। রামচন্দ্র মজুমদারের স্ত্রী সেজে ননীবালাদেবী জেলে গিয়ে জেনে এলেন সেই লুকানো পিস্তলের খবর। সেদিনকার সমাজে এক বাল্যবিধবার এই সাহসী পদক্ষেপের কথা চিন্তাই করা যেত না।
১৯১৫ সালের সেপ্টেম্বরে চন্দননগরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতে থাকেন ননীবালাদেবী। পুলিশের নজর পড়ে। ননীবালাকে গ্রেফতার করতে তৎপর হয়ে উঠল পুলিশ। তাঁকে না পেয়ে তাঁর বাবাকে পুলিশ দফতরে ডেকে সকাল থেকে বিকেল জেরা করা হত। ততদিনে পেশোয়ারে পালিয়ে যান ননীবালাদেবী। খবর পেয়ে পেশোয়ার গেল পুলিশ। ননীবালাদেবী তখন অসুস্থ। সেই অবস্থাতেই গ্রেফতার করে তাঁকে কাশীর জেলে চালান দিল পুলিশ।
কাশীতে প্রতিদিন ননীবালাকে জেরা করতে থাকে ডেপুটি পুলিশ সুপার জিতেন বন্দ্যোপাধ্যায়। নানারকম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেও ননীবালাদেবীর পেট থেকে কথা বের করতে পারেনি পুলিশ। কাশীর জেলে ছিল পানিশমেন্ট সেল। মাটির নিচে এই সেলে কোনও জানলা ছিল না, দরজা ছিল একটাই। আধ ঘণ্টা করে এই ঘরে ননীবালাদেবীকে আটকে রাখা হত। কিন্তু স্নায়ুর পরীক্ষাতেও উত্তীর্ণ ননীবালা। তৃতীয় দিন তাঁকে প্রায় ৪৫ মিনিট আটকে রাখা হয়। সেদিন তালা খুলে দেখা গেল ননীবালা মাটিতে পড়ে আছেন, সংজ্ঞাহীন।
কাশী থেকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে আসা হল ননীবালা দেবীকে। ততদিনে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন সকালে পুলিশের দফতর ইলিসিয়াম রো-তে আনা হত ননীবালাদেবীকে। জেরা করত আইবি-র স্পেশাল সুপার গোল্ডি। সুপার জিজ্ঞাসা করল, কী করলে ননীবালা দেবী খাবেন। ননীবালা বললেন, বাগবাজারে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রী সারদাদেবীর কাছে তাঁকে রেখে এলে তিনি খাবেন। গোল্ডি বলল, দরখাস্ত লিখে দিতে। ননীবালাদেবী দরখাস্ত লিখলেন। গোল্ডি সেটা ছিঁড়ে ফেলে দিল। মুহূর্তে ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মত লাফিয়ে উঠে গোল্ডির গালে সপাটে চড় বসিয়ে দিলেন ননীবালা দেবী। দ্বিতীয় চড় মারার আগেই সিআইডি কর্মচারীরা ননীবালাদেবীকে চেপে ধরেন। ননীবালা দেবী তখন চিৎকার করছেন। বলছেন, ‘ছিঁড়ে ফেলবে তো দরখাস্ত লিখতে বলেছিল কেন? আমাদের দেশের মানুষের কোনও মান সম্মান থাকতে নেই?’
১৮১৮ সালের ৩ নং রেগুলেশনে ননীবালাদেবীই ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা স্টেট প্রিজনার।
আরও bengalism: গোপন ডেরায় মাস্টারদার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, পুরুষের ছদ্মবেশে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
- (Jai Hind) গোপন ডেরায় মাস্টারদার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, পুরুষের ছদ্মবেশে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar) - June 25, 2023
- (Jai Bangla) বাঙালির অপমানের জবাবে বুকে রোলার তুলেছিলেন মহেন্দ্রনাথ - June 23, 2023
- (Vande Mataram) বন্দেমাতরম: বাংলার প্রথম গুপ্ত বিপ্লবী দল খুলতে সাহায্য করেছিলেন সরলা দেবী (Sarala Devi Choudhurani) - December 21, 2018