আজাদ হিন্দ ফৌজ মোকদ্দমায় বন্দিদের মুক্তির দাবিতে তখন কলকাতা উত্তাল। ডালহৌসি স্কোয়ার আম জনতার জন্য নিষিদ্ধ এলাকা। ১৯৪৫ সালের ২১ নভেম্বর। সেদিন সেই নিষিদ্ধ ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকেই মিছিল করে চলেছে ছাত্ররা। দাবি, আজাদ হিন্দ মামলার বন্দিদের মুক্তি চাই। ধর্মতলায় মিছিল আটকাল পুলিশ। বাধা উড়িয়েই এগিয়ে চলল ছাত্ররা। তারপরই ছাত্রদের দিকে ধেয়ে এল ব্রিটিশ পুলিশের গুলি। আহত অসংখ্য। নিহত ছাত্র রামেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাত তখন ১২টা। সেদিন ধর্মতলার রাস্তায় ছুটে গিয়েছিলেন জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায়। হাসপাতালে আহতদের দেখে ধর্মতলায় ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। বললেন, “ বাংলার ছাত্র, তোমরা অসীম বীরত্ব দেখিয়েছ। পুলিশের গুলি তোমাদের ভয় দেখাতে পারেনি। ”
জ্যোতির্ময়ী দেবীর মা কাদম্বরী গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন বাংলার প্রথম মহিলা গ্র্যাজুয়েট, ডাক্তারও। রাজনৈতিক কর্মী ও সমাজ সেবিকা হিসেবেও কাজ করেছেন কাদম্বরী দেবী। জ্যোতির্ময়ী দেবীর বাবা দ্বারকানাথ ছিলেন সমাজসেবক। তাই দেশের জন্য কিছু করার প্রেরণা বাবা-মায়ের থেকেই পেয়েছিলেন তিনি।
এম এ পাশ করেন জ্যোতির্ময়ী দেবী। তারপর কর্মজীবনে বেথুন, কটক ব়্যাভেনশ কলেজ, কলম্বো বুদ্ধিস্ট গার্লস কলেজ, জলন্ধর গার্লস কলেজ, কলকাতার ব্রাহ্ম গার্লস—নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষা ছিলেন। কংগ্রেসের কাছাকাছি আসেন জ্যোতির্ময়ী দেবী।
১৯২০ সাল। সেবার কলকাতায় বসল কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন। নারী স্বেচ্ছাসেবিকা বাহিনী গঠন করলেন জ্যোতির্ময়ী। তাঁর নেতৃত্বে দলবদ্ধ ভাবে কাজ করল মেয়েরা। জ্যোতির্ময়ীর পারদর্শিতায় মগ্ধ হন দেশবন্ধু।
১৯৩০ সাল নাগাদ চাকরি ছেড়ে দেশ সেবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়লেন জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রামে শহরে নানা সভা সমিতিতে সকলকে দেশের কাজে যোগ দেওয়ার অণুপ্রেরণা জোগাতে থাকেন তিনি। ১৯৩২ সালে আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেন জ্যোতির্ময়ী। জেলে যান।
১৯৩৩ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলারও নির্বাচিত হন তিনি।
এককালে অধ্যক্ষা জ্যোতির্ময়ী বরাবরই ছাত্রছাত্রীদের দরদী। বলতে গেলে, ছাত্র বন্ধু। তাই ১৯৪৫ সালের সেই দিন মাঝরাতে ধর্মতলায় ছুটে গিয়েছিলেন তিনি। সারারাত ধর্মতলার রাস্তায় ছাত্রদের পাশে থেকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। ২২ নভেম্বর আরও ছাত্র এসে জুটল। দ্বিগুণ উদ্দীপনায় মিছিল চলল ডালহৌসি স্কোয়ারের দিকে। ফের ধেয়ে এল গুলি, রক্ত ঝরল। তবে ছাত্রদের ডালহৌসি স্কোয়ার যাওয়ার আন্দোলনের কাছে মাথা নত করল ব্রিটিশ পুলিশ।
২২ নভেম্বর শহিদ ছাত্র রামেশ্বরের মৃতদেহ নিয়ে বেরোল শোভাযাত্রা। শ্মশানযাত্রায় রয়েছেন জ্যোতির্ময়ী দেবী। হঠাৎ পিছন থেকে এসে জ্যোতির্ময়ী দেবীর গাড়িতে ধাক্কা মারল মিলিটারি ট্রাক। সেদিনই মারা যান ‘ছাত্রবন্ধু’ জ্যোতির্ময়ী গঙ্গোপাধ্যায়।
মাস্টারদা কি মন্ত্র জানতেন? অনেকের ধারণা ছিল, মাস্টারদা মন্ত্র জানেন! হাওয়ার সঙ্গে মিশে যেতে পারেন,… Read More
কল্পনা দত্ত তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে। মাস্টারদার সঙ্গে এটাই প্রথম দেখা… Read More
বাঙালিকে অপমান! গুরুর নির্দেশে নতুন খেলা দেখাতেই হবে। বুকে ১৬২ মণের রোলার তুললেন সার্কাস বিখ্যাত… Read More
রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নী সরলা দেবী ছোট থেকেই জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত। লিখেছেন শতাধিক স্বদেশপ্রেমের গান। স্বদেশী আন্দোলনের অংশ… Read More
অনুশীলন সমিতির বিপ্লবী অমূল্য মুখোপাধ্যায়ের বোন পারুল। টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার পারুলের পেট থেকে কথা… Read More
‘বেলেল্লাপনার এক শেষ!’ লোকনিন্দা উড়িয়ে সেদিন স্বামী শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লেখাপড়া শিখেছিলেন স্ত্রী রাজকুমারী। স্ত্রীর… Read More