The Lector

(Jai Hind) গোপন ডেরায় মাস্টারদার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, পুরুষের ছদ্মবেশে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar)

(Pritilata Waddedar)প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। বাংলার প্রথম ‘শহিদ’ মহিলা বিপ্লবী। জয় হিন্দ (Jai Hind)

চট্টগ্রামের (Chittagong) ধলঘাট গ্রাম। ১৯১১ সালের ৫ মে সেখানেই জ্ন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। প্রীতিলতার ডাক নাম ছিল রানি। বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার কাজ করতেন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যালিটিতে । ছোট থেকেই প্রীতিলতার স্মৃতিশক্তি প্রখর। খেলাধূলাতেও ভাল। প্রীতিলতার প্রশংসা লোকের মুখে মুখে। প্রবেশিকা পরীক্ষায পাশ করে ঢাকায় আই-এ পড়তে যান প্রীতিলতা। ঢাকায দীপালি সঙ্ঘে যোগ দেন। সেখানেই লাঠি চালানো অসি খেলা শেখেন প্রীতিলতা। বিপ্লবের কাজে জড়িয়ে পড়ার পর প্রীতিলতাকে বন্দুক চালানো শেখান নির্মল সেন। সেটা অনেক পরে।  ১৯৩২ সালে।

বিএ পাশ করে ১৯৩২ সালে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার তখন চট্টগ্রামে নন্দনকানন গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মাস্টারদা।ধলঘাট গ্রামে প্রয়াত নবীন চক্রবর্তীর বাড়িতে লুকিয়ে মাস্টারদা সূর্য সেন (Masterda Surya sen)।সঙ্গে আত্মগোপন করে আছেন নির্মল সেন, অপূর্ব সেন। প্রয়াত নবীন চক্রবর্তীর বিধবা স্ত্রী সাবিত্রী দেবী ও ছেলে রামকৃষ্ণ বিপ্লবীদের সেবাযত্ন করছেন।বাড়ির কিছুটা দূরেই ধলঘাট মিলিটারি ক্যাম্প।

মাস্টারদার সঙ্গে প্রীতিলতার দেখা করিয়ে দেন কল্পনা

সেই বাড়িতেই একদিন পুরুষের ছদ্মবেশে এলেন প্রীতিলতা।কল্পনা দত্ত তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে।মাস্টারদার সঙ্গে এটাই প্রথম দেখা প্রীতিলতার। এরপর মাঝেমধ্যেই এসে মাস্টারদার সঙ্গে দেখা করতেন তিনি।

১৯৩২ সালের ১১ জুন। সেদিন মাস্টারদার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন প্রীতিলতা। দিন কতক সেখানেই থাকার কথা। দো-তলা বাড়ি। মাস্টারদার সঙ্গে নির্মল সেন ও অপূর্ব সেনও রয়েছেন। ১৩ জুন। বিপ্লবী কাজকর্ম নিয়ে কথা হচ্ছে। ঘড়িতে তখন রাত আটটা। হঠাত বিপদ! বাইরে পুলিশ। রিভলবার হাতে দাঁড়িয়ে স্বয়ং ক্যাপ্টেন ক্যামারন। সঙ্গে দারোগা মনোরঞ্জন সেন আর বাড়ি ঘিরতে শুরু করেছে মিলিটারি। খবর পেল কী করে?

বাড়ির ভিতরে তখন মাস্টারদা, নির্মল সেন, অপূর্ব সেন ও প্রীতিলতা। সকলেই নিচের ঘরে খেতে বসেছেন। আস্তে আস্তে এগোচ্ছে পুলিশ। নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন ক্যামারন। পায়ের শব্দ শুনেই সতর্ক মাস্টারদা, অপূর্ব সেনরা। বাঁশের সিঁড়ি দিয়ে দো’তলায় উঠছেন সকলে। লাথি মেরে ঘরের দরজা ভেঙে ফেললেন ক্যাপ্টেন ক্যামারন। তৈরি হয়েই ছিলেন অপূর্ব সেন, নির্মল সেনরা। দরজা ভাঙতেই গুলি ছুড়লেন। লুটিয়ে পড়লেন ক্যাপ্টেন ক্যামারন। কিছুক্ষণ সব নিস্তব্ধ। পায়ার প্রস্তুতি নিলেন বিপ্লবীরা। বারান্দার টিনের উপরে উঠে পালানোর পরিকল্পনা। কিন্তু টিনে উঠতেই আওয়াজ হল। গুলি চালাল বাহিনী। নিহত হলেন নির্মল সেন। বাকি তিনজন আস্তে আস্তে নেমে এলেন অন্ধকারে। ঠিক করলেন পূর্ব দিকের পাটিপাতার ঝাড়ের মধ্যে দিয়ে পালাবেন। একটু আওয়াজ হতেই ফের গুলি চালাল বাহিনী। গুলিবিদ্ধ হলেন অপূর্ব সেন। শহিদ হলেন। পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে গেলেন মাস্টারদা ও প্রীতিলতা।

ভোররাতে সাবিত্রী দেবী ও তাঁর ছেলে রামকৃষ্ণ গ্রেফতার হলেন। ততক্ষণে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ও সৈন্যাধ্যক্ষ মেজর গর্ডন দলবল নিয়ে বাড়িতে উপস্থিত। ততক্ষণে পুলিশ জেনে গেছে, মাস্টারদা সূর্য সেন ও আরও একজন আগের রাতে এই বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু এত নজরদারির মাঝেও তাঁরা গা ঢাকা দিলেন কীভাবে?

বাড়ি খানাতল্লাশি হল। তল্লাশিতে বেশ কিছু নথি উদ্ধার হল। সেই নথিপত্রের মধ্যে ছিল দুটি হাতেলেখা বইয়ের পাণ্ডুলিপি। তার একখানি ছিল গণেশ ঘোষের লেখা। ভারতের বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাস। চট্টগ্রাম জেলে বসেই লিখেছিলেন গণেশ ঘোষ। কৌশলে বাইরে পাঠিযেছিলেন। দ্বিতীয় পাণ্ডুলিপিটা ছিল সূর্য সেনের লেখা। সেখানে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের পূর্ণ বিবরণ লেখা ছিল। লেখা ছিল, অভিযানের প্রস্তুতি,১২ হাজার টাকা, ১০ হাজার কার্তুজ কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল,  সব কথা।  আর লেখা ছিল সূর্য সেনের আক্ষেপের কথা। আক্ষেপ মানে? ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠনের দিন ইউরোপিয়ান ক্লাবও আক্রমণের কথা ছিল। কিন্তু কিছু কারণে পরিকল্পনা রূপায়ন করা যায়নি। সেকথাই লেখা ছিল। সেই ইউরোপিয়ান ক্লাব। পরবর্তী কালে যে ক্লাবে আক্রমণ চালাবেন প্রীতিলতা। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর।

সে যাই হোক। পরদিন প্রীতিলতার বাড়িতে গেল ব্রিটিশ পুলিশ। বাড়ি খানা তল্লাশি হল। প্রীতিলতাকে জেরা করা হল। তাঁর উপর শুরু হল কড়া নজরদারি।  বিপ্লবী কাজের সুবিধার জন্য মাস্টারদার কাছে আত্মগোপন করার নির্দেশ চাইলেন প্রীতিলতা।  নির্দেশ এল। বাড়ি ছাড়লেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার।

শুরু হল আত্মগোপনের জীবন। মাস্টারদার সঙ্গে দেশের কাজ। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরতে লাগলেন প্রীতিলতা। ওদিকে ব্রিটিশ পুলিশও মরিয়া। মোস্ট ওয়ান্টেড মাস্টারদা। তাঁকে গ্রেফতারে ১০ হাজার টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করা হল। পুলিশের খাতায় নাম উঠে গেছে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারেরও। সাহসীনিকে গ্রেফতারের পুরষ্কার ৫০০ টাকা।

©bengalism.com

আরও bengalism: বাঙালির অপমানের জবাবে বুকে রোলার তুলেছিলেন মহেন্দ্রনাথ

Collected

Collected from Various Sources

Recent Posts

(Vande Mataram) বন্দে মাতরম: বিপদের সামনে বিচলিত হতেন না, ছদ্মবেশী মাস্টারদা সূর্য সেন আজও মিথ (Masterda Surya Sen)

মাস্টারদা কি মন্ত্র জানতেন? অনেকের ধারণা ছিল, মাস্টারদা মন্ত্র জানেন! হাওয়ার সঙ্গে মিশে যেতে পারেন,… Read More

6 months ago

(Jai Bangla) বাঙালির অপমানের জবাবে বুকে রোলার তুলেছিলেন মহেন্দ্রনাথ

বাঙালিকে অপমান! গুরুর নির্দেশে নতুন খেলা দেখাতেই হবে। বুকে ১৬২ মণের রোলার তুললেন সার্কাস বিখ্যাত… Read More

10 months ago

(Vande Mataram) বন্দেমাতরম: বাংলার প্রথম গুপ্ত বিপ্লবী দল খুলতে সাহায্য করেছিলেন সরলা দেবী (Sarala Devi Choudhurani)

রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নী সরলা দেবী ছোট থেকেই জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত। লিখেছেন শতাধিক স্বদেশপ্রেমের গান। স্বদেশী আন্দোলনের অংশ… Read More

5 years ago

(Vande Mataram) বন্দেমাতরম: ছাদ লাফিয়ে ঘরে ঢুকে গোপন নথিতে আগুন দিয়েছিলেন পারুল (Parul Mukherjee)

অনুশীলন সমিতির বিপ্লবী অমূল্য মুখোপাধ্যায়ের বোন পারুল। টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার পারুলের পেট থেকে কথা… Read More

5 years ago

(Banglar Siksha)শশীপদর স্কুলের প্রথম ছাত্রী স্ত্রী রাজকুমারী

‘বেলেল্লাপনার এক শেষ!’ লোকনিন্দা উড়িয়ে সেদিন স্বামী শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লেখাপড়া শিখেছিলেন স্ত্রী রাজকুমারী। স্ত্রীর… Read More

5 years ago

চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা- লোকনাথ বল (Loknath Bol)

জালালাবাদের যুদ্ধের পর চন্দননগরে গা ঢাকা দেন লোকনাথ। চন্দনগরের সেই গোপন আস্তানা তাঁকে গ্রেফতার করে… Read More

5 years ago