নদিয়ার ছাপোষা ঘরের ছেলেই নানা দেশ ঘুরে পৌঁছে গেলেন ব্রাজিল। তারপর ব্রাজিলিয়ান আর্মির কর্পোরাল থেকে ধাপে ধাপে কর্নেল। নানা উত্থান পতনে ঘেরা জীবনযুদ্ধের হিরোই কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস। (Col Suresh Biswas)
ছোট থেকেই ডাকাবুকো ছিলেন সুরেশ বিশ্বাস। তাঁকে দলের সর্দার মানত সমবয়সী প্রায় সকলেই। একবার মাছ ধরে বাড়ি ফিরছিলেন। হঠাৎ সামনে বুনো শুয়োর। দুই বন্ধুকে পালাতে বলে মাছের ছিপ দিয়ে এমন মারলেন যে বুনো শুয়োরটা গোঙাতে লাগল। সেই ঘটনার সাক্ষী কয়েকজন নীলকর সাহেব। তাঁরা শিকার করে ফিরছিলেন। দস্যি ছেলের সাহস দেখে সুরেশের সঙ্গে আলাপ পরিচয় করেন সাহেবরা। সুরেশও তাঁদের সান্নিধ্যে ইংরেজি শেখেন।
১৮৬১ সালে নদিয়ার নাথপুরে জন্মগ্রহণ করেন সুরেশ বিশ্বাস। বাবা সরকারি চাকুরে। পড়াশুনোর চেয়ে খেলাধূলোতেই বেশি উৎসাহ ছিল ছোট্ট সুরেশের। ভবানীপুরের লন্ডন মিশন স্কুলে তাঁকে ভর্তি করে দেন বাবা গিরিশচন্দ্র বিশ্বাস। স্কুলের হেড মাস্টার সুরেশকে খুব স্নেহ করতেন। কিন্তু কিছুতেই যেন বাগে আসছিলেন না তিনি। ১৪ বছর বয়সে খ্রিস্টান হন সুরেশ। অগত্যা বাড়ির ত্যাজ্যপুত্র, তারপর ভাগ্যান্বেশন।
কোনও চাকরিতেই থিতু হতে পারছিলেন না সুরেশ বিশ্বাস। ক্যালকাটা স্পেন্স হোটেলে ট্যুরিস্ট গাইডের কাজ করছিলেন। ঠিক করেন রেঙ্গুন যাবেন। সেখানেও তেমন কিছু হল না। পৌঁছলেন লন্ডন, তখন ১৭ বছর বয়স। কুলিগিরি, কাগজ বিলি- নানা কাজের পর অবশেষে কেন্টে একটি সার্কাস দলে ভিড়ে যান সুরেশ। জিমন্যাস্টিকে দক্ষ, পশুদের বশ করতেও জুড়ি নেই। নাম করতে থাকেন সুরেশ। সার্কাস দলে এক জার্মান মেয়ের প্রেমে পড়েন। কিন্তু মেয়ের বাড়ির আপত্তিতে সেই প্রেম টিকল না। ততদিনে অনেক দেশ ঘুরে ফেলেছেন সুরেশ।
জার্মানি, আমেরিকা ঘুরে একসময় ব্রাজিলে পৌঁছল সার্কাস। অবসর সময়ে কলেজে লেকচারার হন সেখানে। ব্রাজিলকে ভালবেসে সেখানেই রয়ে যান নদিয়ার সুরেশ। ব্রাজিলীয় মেয়েকে বিয়ে করেন। ১৮৮৭ সালে ব্রাজিল সেনায় কর্পোরাল হিসেবে যোগ দেন। ধাপে ধাপে উন্নতি হতে থাকে। ১৮৯৩ সালে লেফটেন্যান্ট হন। ততদিনে রাজতন্ত্রের পতন হয়েছে। পরের বছর নৌ বিদ্রোহ দমনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি। এরপরই নাথরয়ের যুদ্ধ (Niteroi)।
শত্রুপক্ষ গোলা বর্ষণ করছেন। কেউ এগোতে সাহস পাচ্ছে না। জনা কয়েক সেনা নিয়ে এগিয়ে যান লেফটেন্যান্ট সুরেশ। বুক চিতিয়ে লড়াই করেন। একসময় পিছু হঠে শত্রুপক্ষ। রিও দে জেনেইরোতে রাতারাতি হিরো হয়ে যান বাঙালি সুরেশ। ১৯০৫ সালে মৃত্যু হয় কর্নেল সুরেশ বিশ্বাসের।
প্রথম বাঙালি হিসেবে ব্রাজিলের মাটিতে পা রেখেছিলেন সুরেশ বিশ্বাসই।
©bengalism.com
মাস্টারদা কি মন্ত্র জানতেন? অনেকের ধারণা ছিল, মাস্টারদা মন্ত্র জানেন! হাওয়ার সঙ্গে মিশে যেতে পারেন,… Read More
কল্পনা দত্ত তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে। মাস্টারদার সঙ্গে এটাই প্রথম দেখা… Read More
বাঙালিকে অপমান! গুরুর নির্দেশে নতুন খেলা দেখাতেই হবে। বুকে ১৬২ মণের রোলার তুললেন সার্কাস বিখ্যাত… Read More
রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নী সরলা দেবী ছোট থেকেই জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত। লিখেছেন শতাধিক স্বদেশপ্রেমের গান। স্বদেশী আন্দোলনের অংশ… Read More
অনুশীলন সমিতির বিপ্লবী অমূল্য মুখোপাধ্যায়ের বোন পারুল। টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার পারুলের পেট থেকে কথা… Read More
‘বেলেল্লাপনার এক শেষ!’ লোকনিন্দা উড়িয়ে সেদিন স্বামী শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লেখাপড়া শিখেছিলেন স্ত্রী রাজকুমারী। স্ত্রীর… Read More