The Lector

আরেক বিদ্যাসাগর

ঈশ্বরচন্দ্র ছাড়াও সেই যুগে আরও কয়েকজন ‘বিদ্যাসাগর’ ছিলেন। তেমনই এক পণ্ডিতপ্রবরের অপার সাগর দর্শন আরেক বিদ্যাসাগর।

সাজেশনে বাঁধা শিক্ষা নয়। সেকালে ব্যাকরণ, সাহিত্য, অলঙ্কার, বেদান্ত, স্মৃতি, ন্যায় ও সাংখ্য শাস্ত্রে অধ্যয়ন করে তবে বিদ্যায় পাণ্ডিত্য অর্জন করতে হত। ব্যুৎপত্তি, জ্ঞানের গভীরতা, বিস্তার—বিবেচনা করে ছাত্রদের উপাধি দিতেন অধ্যাপকরা। বিদ্যাবাগীশ, বিদ্যালঙ্কার ইত্যাদি নানা উপাধি দেওয়া হত উত্তীর্ণ ছাত্রকে। জ্ঞানের ব্যাপ্তি বিবেচনার পর বিদ্যাসাগর উপাধিতে ভূষিত হন বীরসিংহের ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রথম বিদ্যাসাগর। ‘বিদ্যাসাগর’ এই উপাধি উচ্চারিত হলে তাঁকেই স্মরণ করা হয়। তবে ঈশ্বরচন্দ্রের পর আরও কয়েকজনকে ‘বিদ্যাসাগর’উপাধি দেওয়া হয়।

ঈশ্বরচন্দ্রের পর বিদ্যাসাগর হিসেবে যিনি সেই যুগে সমধিক পরিচিতি অর্জন করেন, তিনি জীবানন্দ বিদ্যাসাগর। জীবানন্দের বাবা তারানাথ তর্কবাচস্পতি ছিলেন সেই যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত। বর্ধমানের কালনাতে থাকতেন তারানাথ। ১৮৪৪ সালের ১১ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন জীবানন্দ। সংস্কৃত কলেজে ছ’বছর অধ্যয়ন করে সর্বোচ্চ পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে ‘তর্ক-বাচস্পতি’ উপাধি পেয়েছিলেন তারানাথ। সেই সংস্কৃত কলেজেই ভর্তি হন জীবানন্দ। কাব্য, ব্যাকরণ, স্মৃতি, ন্যায়, সাংখ্য, মীমাংসা ইত্যাদি বহুশাস্ত্রের পাঠশিক্ষা করেন তিনি। ১৮৭০ সালে ২৬ বছর বয়সে বিদ্যাসাগর উপাধি অর্জন করেন জীবানন্দ। বাবা তারানাথের সঙ্গে বহু কাজ করেন তিনি। অন্তত ২১৫টিরও বেশি সংস্কৃত গ্রন্থ সম্পাদনার কাজ করেছেন।

কথিত আছে, কলকাতা থেকে কালনা পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তারানাথ তর্কবাচস্পতিকে সংস্কৃত কলেজের ব্যাকরণ শাস্ত্রের প্রধান অধ্যাপকের পদ গ্রহণের অনুরোধ করেন। তারানাথ এই সুযোগ গ্রহণ করেছিলেন। জয়পুরের মহারাজার আঅকমন্ত্রণ গ্রহণ করে তাঁর রাজ্যে গিয়েছিলেন তারানাথ। সেখানকার পণ্ডিতদের তর্কে পরাজিত করে অর্থ ও রাজসম্মান লাভ
করেছিলেন তিনি। তবে তারানাথের পুত্র জীবানন্দ বাংলার বাইরে যাওযার বহু প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য লাহোর ওরিয়েন্টাল কলেজের অধ্যক্ষের পদ। জয়পুরের মহারাজ, কাশ্মীরের মহারাজ এবং নেপালের মহারাজের তৎকালীন সহস্র মুদ্রার চাকরিও প্রত্যাখান করেছিলেন জীবানন্দ বিদ্যাসাগর। কালনায় চতুষ্পাঠী স্থাপন করে বহু বছর বিদ্যাদান করেন তিনি।

প্রথমে বিধবা বিবাহ প্রস্তাব সমর্থন করলেও পরে এর বিরোধিতা করেন তারানাথ তর্ক বাচস্পতি। তানিয়ে দ্বিতীয় বিদ্যাসাগর ও তাঁর বাবা তারানাথকে নিয়ে ব্যঙ্গ পরিহাসও করেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। লিখেছিলেন, ‘ খুড়র (অর্থাৎ তারানাথ) এই সময় কলম করে রাখা ভাল। কারণ আঁটিতে যেটি হয়েছে সেটি টক ও পোকাখেকো।’
১৯২৩ সালে কলকাতায় জীবানন্দ বিদ্যাসাগরের মৃত্যু হয়।

dbando

Blogger

Recent Posts

(Vande Mataram) বন্দে মাতরম: বিপদের সামনে বিচলিত হতেন না, ছদ্মবেশী মাস্টারদা সূর্য সেন আজও মিথ (Masterda Surya Sen)

মাস্টারদা কি মন্ত্র জানতেন? অনেকের ধারণা ছিল, মাস্টারদা মন্ত্র জানেন! হাওয়ার সঙ্গে মিশে যেতে পারেন,… Read More

7 months ago

(Jai Hind) গোপন ডেরায় মাস্টারদার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, পুরুষের ছদ্মবেশে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar)

কল্পনা দত্ত তাঁকে পরিচয় করিয়ে দিলেন মাস্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে। মাস্টারদার সঙ্গে এটাই প্রথম দেখা… Read More

10 months ago

(Jai Bangla) বাঙালির অপমানের জবাবে বুকে রোলার তুলেছিলেন মহেন্দ্রনাথ

বাঙালিকে অপমান! গুরুর নির্দেশে নতুন খেলা দেখাতেই হবে। বুকে ১৬২ মণের রোলার তুললেন সার্কাস বিখ্যাত… Read More

10 months ago

(Vande Mataram) বন্দেমাতরম: বাংলার প্রথম গুপ্ত বিপ্লবী দল খুলতে সাহায্য করেছিলেন সরলা দেবী (Sarala Devi Choudhurani)

রবীন্দ্রনাথের ভাগ্নী সরলা দেবী ছোট থেকেই জাতীয়তাবাদে অনুপ্রাণিত। লিখেছেন শতাধিক স্বদেশপ্রেমের গান। স্বদেশী আন্দোলনের অংশ… Read More

5 years ago

(Vande Mataram) বন্দেমাতরম: ছাদ লাফিয়ে ঘরে ঢুকে গোপন নথিতে আগুন দিয়েছিলেন পারুল (Parul Mukherjee)

অনুশীলন সমিতির বিপ্লবী অমূল্য মুখোপাধ্যায়ের বোন পারুল। টিটাগড় ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার পারুলের পেট থেকে কথা… Read More

5 years ago

(Banglar Siksha)শশীপদর স্কুলের প্রথম ছাত্রী স্ত্রী রাজকুমারী

‘বেলেল্লাপনার এক শেষ!’ লোকনিন্দা উড়িয়ে সেদিন স্বামী শশীপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লেখাপড়া শিখেছিলেন স্ত্রী রাজকুমারী। স্ত্রীর… Read More

5 years ago