‘অসামাজিক’বাবাকে খোঁচা দিতেই গান বাঁধা সুফি মাস্টারের
- ‘অসামাজিক’বাবাকে খোঁচা দিতেই গান বাঁধা সুফি মাস্টারের - September 9, 2018
- আরেক বিদ্যাসাগর - September 6, 2018
পরাধীন মালদায় গম্ভীরার কিংবদন্তী গীতিকার সুফি মাস্টার। উনবিংশ শতকের তখন শেষের দিক। মালদার ইংরেজবাজারের ফুলবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন মহম্মদ সুফি রহমান। বাবা নেশাদ্রব্যের কারবারি। ছেলে সুফি কিছুতেই তা মেনে নিতে পারতেন না। আলকাপের গানের স্পষ্ট কথাতেই যেন ঝোঁক সুফির। তিনি প্রথম গান বাঁধেন তাঁর বাবাকে মূল চরিত্র করে। বাবার নেশার কারবার, অসামাজিক জীবনকে ব্যঙ্গ করে সেই গান তৈরি হয়।
তখনকার দিনে আকবরের আলকাপের দল ছিল নামকরা। সেই দলে যোগ দেন সুফি। গান লিখে সুরও দিতেন। আলকাপের মাস্টার, খ্যাতি হয় সুফি মাস্টার নামে। এরপর আলকাপের দল ছেড়ে গম্ভীরার দলে যোগ দেন। কিশোরী পণ্ডিতের গম্ভীরা দলে যোগ দিয়ে ক্রমে আরও নামডাক হয়। আলকাপ ও গম্ভীরা মিলিয়ে ৬০টি পালা বাঁধেন সুফি মাস্টার।
নানা প্রতিকূলতার মধ্যে লেখাপড়া শিখে ডাক বিভাগের হেড পোস্টম্যান পদে নিযুক্ত হন সুফি মাস্টার। পোস্ট অফিসের কাজ শেষে হাটখোলার এক চামড়ার গুদামের বারান্দায় কুপি জ্বালিয়ে গান লিখতে বসতেন সুফি মাস্টার।
ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সাঁওতাল নেতা জিতু মুর্মুর নেতৃত্বে বিদ্রোহ নিয়ে গান লেখেন সুফি মাস্টার। ১৯৩২ সালে পুলিশের গুলিতে জিতুর মৃত্যু হয়। প্রতিবাদে গান লেখেন সুফি। কিন্তু ব্রিটিশ পুলিশের ভয়ে কোনও দল সেই গান গায়নি। তখন সুফি কয়েকজনকে তালিম দিয়ে সেই গান পরিবেশন করেন। গানে দু’টি চরিত্র—জিতু ও জেলাশাসক।
জিতু সাঁওতালের গান
অনার্য জাতি এ সাঁতাল
পচুই খেয়ে হই মাতাল
আদিনাটি করতে এলাম দখল হে ।।
গান্ধী মোদের বুড়াটি
সেনাপতি ছঁড়াটি
মন্ত্রি জিতু এরা সবে প্রজা হে ।।
জিতু এটা আদিনাথের ঘর
জনম জনম থাকব মোরা ইহার ভিতর ।
ম্যাজিস্ট্রেট এটা আদিনাথের ঘর বলিস
বলে কোন ইতিহাস বই হে ।।
জিতু শিবং সত্যম্ মধুর বাজা
বাস করেছেন পাণ্ডব রাজা
উড়িয়ে দিয়ে ধর্মের ধ্বজা,
বাজাব নিরন্তর ।
এটা আদিনাথের ঘর ।।
স্বাধীনতার পর মহম্মদ সুফি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রোহনপুরে চলে যান। পরে একবার মালদায় এসেছিলেন। ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে রোহনপুরেই মৃত্যু হয় সুফি মাস্টারের।
Picture Courtesy: http://maldamalancha.com