জেলযাত্রার ‘আনন্দে’ই মিছিলে ছুটেছিলেন কিশোরী মায়া
দু’বছর বয়সে মা মারা যাওয়ায় মাতামহী মেঘমালা বসুর কাছেই মানুষ হন মায়া ঘোষ। মাতামহ ছিলেন গণিতের বিশিষ্ট অধ্যাপক ও বীজগণিত প্রণেতা কে পি বসু। মাতামহী মেঘমালা দেবীর দুই ভাই অতুলকৃষ্ণ ও অমরকৃষ্ণ ঘোষ বিপ্লবী ছিলেন। বিপ্লবীদের কাজ মনে প্রাণে সমর্থন করতেন মেঘমালা দেবী। বাড়িতেও বিপ্লবীদের আনাগোনা ছিল। বিপ্লবীদের কাহিনি শুনে, তাঁদের সংস্পর্শে থাকতে থাকতে তাই ছোট থেকেই স্বাধীনতার স্পৃহা জেগে ওঠে মায়া ঘোষের মনে।
১৯৩০ সাল। মায়া ঘোষের বয়স তখন বছর ১৫। দেশসেবার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে যেন ছটফট করছিলেন তিনি। ভূপেন্দ্রকুমার দত্তর ছোট বোন স্নেহলতাও তাঁর যোগ্য সঙ্গী। একদিন বাড়িতে আসেন কংগ্রেস নেত্রী মোহিনী দেবী। আন্দোলনের কথা বলছিলেন তিনি। কথায় কথায় মোহিনী দেবী জিজ্ঞাসা করলেন, আন্দোলন করতে গিয়ে যদি জেলে যেতে হয়, মায়া ঘোষ ও তাঁর সঙ্গীরা পারবেন কি না। লাফিয়ে ওঠেন মায়া দেবী। স্নেহলতা দত্ত ও আরেক সঙ্গীকে নিয়ে লুকিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে বেরিয়ে পড়লেন পঞ্চদশী মায়া।
পুলিশের হাতে ধরা পড়লের মায়া দেবীরা। কিন্তু বয়স কম, তাই লালবাজার থেকেই ছাড়া পেয়ে গেলেন তাঁরা। জেলে যাওয়া হল না, মনটা যেন ভেঙে গেল। তবে হাল ছাড়লেন না, ততদিনে ঠিক করে ফেলেছেন দেশের কাজেই জীবন সঁপে দেবেন।
বাড়ির শত চাপেও বিয়েতে রাজি হলেন না মায়া দেবী। ১৯৩৬ সালে বিএ পাশ করেন তিনি। বছর দুয়েক পর বিপ্লবী নেতারা জেল থেকে মুক্তি পেলেন। বিপ্লবী রসিকলাল দাস মায়া দেবীকে পরিচয় করিয়ে দিলেন মাসিক পত্রিকা ‘মন্দিরা’র সম্পাদিকা কমলা দাশগুপ্তর সঙ্গে। ‘মন্দিরা’র কাজ যেন স্বাধীনতা সংগ্রামের অঙ্গ, এমনটাই মনে করতেন মায়া দেবী।
১৯৪১ সালে বীরভূমের রামপুরহাটে স্কুলের চাকরি নিয়ে চলে যান মায়া ঘোষ। ১৯৪২ সালে অগাস্ট আন্দোলনের আগেই একের পর এক বিপ্লবীকে গ্রেফতার করতে থাকে পুলিশ। ততদিনে কংগ্রেসের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে চলেছেন মায়া দেবী। বেশ কয়েকজন শিক্ষিকাও মায়া দেবীর সঙ্গে যোগ দিলেন। আস্তে আস্তে বাড়ছিল আন্দোলনের ঝাঁঝ। আন্দোলন থামাতে আনা হল সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী। ঠিক হল, ৩১ অগাস্ট থানা দখল হবে। মায়া ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল চলে গেল আদালত বন্ধ করতে। তাঁর নেতৃত্বে সিভিল কোর্টে ওড়ানো হল জাতীয় পতাকা। একটা সময় মায়া ঘোষদের ঘিরে ফেলল সশস্ত্র পুলিশ। গোরা পুলিশ অফিসারের চোখ রাঙানির সামনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকেন মায়া ঘোষ। মহকুমাশাসকের কাছে গুলি চালানোর অনুমতি চাইল সেই অফিসার। অনুমতি না মেলায়, গায়ের জোরে আন্দোলন দমাতে চায় ব্রিটিশ পুলিশ। গ্রেফতার করা হল মায়া ঘোষকে।
একবছর দশ মাস সশ্রম কারাদণ্ডের পর ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে জেল থেকে মুক্ত হন মায়া ঘোষ।
- (Jai Hind) গোপন ডেরায় মাস্টারদার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, পুরুষের ছদ্মবেশে প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar) - June 25, 2023
- (Jai Bangla) বাঙালির অপমানের জবাবে বুকে রোলার তুলেছিলেন মহেন্দ্রনাথ - June 23, 2023
- (Vande Mataram) বন্দেমাতরম: বাংলার প্রথম গুপ্ত বিপ্লবী দল খুলতে সাহায্য করেছিলেন সরলা দেবী (Sarala Devi Choudhurani) - December 21, 2018