A Bangla Blog on Kolkata, Bengal and Bengalees in Bengali

(Jai Bangla) বাঙালির অপমানের জবাবে বুকে রোলার তুলেছিলেন মহেন্দ্রনাথ - BENGALISM
MahendraNath Das Mazumder BodybuilderThe LectorHEROIC

(Jai Bangla) বাঙালির অপমানের জবাবে বুকে রোলার তুলেছিলেন মহেন্দ্রনাথ

(Jai Bangla) গায়ে জোর না থাকলে বুকে সাহস জাগে না। মনে করতেন মহেন্দ্রনাথ। আক্ষেপ করে বলতেন, সমস্ত দেশটা যেন ভয়ে জড়সড়। এর একমাত্র কারণ শরীরচর্চার অভাব। সারা জীবন দিয়ে ‘বীর’ মহেন্দ্রনাথ দেখিয়েছিলেন, বাঙালি মাথা নীচু করতে জানে না।

বাংলার ১২৮৫ সন। জৈষ্ঠ্য মাসে ঢাকার বিক্রমপুরে জন্ম মহেন্দ্রনাথ। পুরো নাম মহেন্দ্রনাথ দাশ মজুমদার। ভর্তি হন গ্রামের উচ্চ-ইংরাজি স্কুলে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময়ই মহেন্দ্রনাথের বাবা মারা যান। অর্থাভাবে আর বেশি ক্লাস পাস দেওয়া হল না। লেখাপড়ায় ক্ষান্ত দিয়ে করতে লাগলেন চাকরির চেষ্টা। কাজও জুটে গেল। কিছুদিন আদালতে নকল-নবিশের কাজ করলেন। মন বসল না। চাকরির খোঁজে গেলেন রংপুর। কাজ হয়ত জুটছিল। কিন্তু বড় কম টাকা। শত চেষ্টাতেও দশ-পনের টাকার চাকরি কিছুতেই যেন মেলে না।

একাজ ওকাজ করে একসময় ব্যায়ামচর্চায় মন দেন মহেন্দ্রনাথ। তখন ব্যায়ামই ধ্যানজ্ঞান। মনপ্রাণ ঢেলে দিয়ে শিখলেন। পরেশনাথের আখড়াতেও যেতেন মহেন্দ্রনাথ। পরেশনাথ ছিলেন সেকালের নাম করা মল্লবীর। পরেশনাথের কাছে অনেক কিছুই শিখেছিলেন মহেন্দ্রনাথ। ততদিনে শুরু করে দিয়েছেন ব্যায়ামের মাস্টারিও। এমন করে চলতে চলতেই একদিন ঢুকে পড়লেন সার্কাসে। বিখ্যাত এবেল সাহেবের গ্রেট ইস্টার্ন সার্কাস।

সার্কাসে এক প্রকার দিন কাটছিল। নামও হয়েছিল মহেন্দ্রনাথের। কিন্তু স্বাধীনচেতা মন তো আত্মনির্ভরতা খোঁজে। তারপর যা হওয়ার তাই হল। নিজেই একটা সার্কাস দল খুলে ফেললেন মহেন্দ্রনাথ।

Mahendra Nath Circus
একটা সার্কাস দল খুলে ফেললেন মহেন্দ্রনাথ

আগেই বলেছি, পরেশনাথের কাছে কুস্তি শিখেছিলেন মহেন্দ্রনাথ। একদিন পরেশনাথের সঙ্গে দেখা করতে এলেন সার্কাসের রামমূর্তি। রামমূর্তি কে? পুরো নাম কোডি রামমূর্তি নাউডু। প্রোফেসর রামমূর্তি নামেই বিখ্যাত ছিলেন। বিখ্যাত ব্যায়ামবীর। তাঁর নিজের সার্কাস দলও ছিল। রামমূর্তিকে ইন্ডিয়ান হারকিউলিস’ উপাধিতে ভূষিত করেন কিং জর্জ V।

প্রোফেসর রামমূর্তির তখন জগৎজোড়া নাম। দুই হাতে দড়ি দিয়ে টেনে দুটি ছুটন্ত মোটরগাড়ি থামিয়ে দিতে পারতেন। বাচ্চাহাতি লোফালুফি করতেন। এমনকী আস্ত একটা হাতি বুকে তুলতে পারতেন রামমূর্তি। সেই সময়ে এই ধরণের খেলা দেখানো মুখের কথা নয়। প্রোফেসর রামমূর্তির তখন সে কি দেমাক!

Prof Rammurthy Bodybuilder
রামমূর্তিকে ‘ইন্ডিয়ান হারকিউলিস’ উপাধিতে ভূষিত করেন কিং জর্জ V

সেই প্রোফেসর রামমূর্তি একদিন এলেন পরেশনাথের সঙ্গে দেখা করতে। কথায় কথায় বাঙালিদের যেন খোঁচা দিতে শুরু করলেন। রামমূৰ্তি বললেন, শরীরচর্চায় নতুন কিছু করে দেখানো বাঙালিদের কম্ম নয়।ব্যঙ্গোক্তি করলেন, সাজা বাজা কেশ, তিন বাংলা দেশ।পরেশনাথের শরীর রাগে রি রি করে উঠল।

সার্কাসে তখন নামডাক হয়েছে মহেন্দ্রনাথের। তাঁকে ডেকে পাঠালেন পরেশনাথ। বললেন, মহেন্দ্র, একটা নতুন কিছু খেলা দেখাও তো, যাতে বাঙালির মানটা বজায় থাকে।

পরেশনাথকে খুব ভক্তি করতেন মহেন্দ্রনাথ। ঠিক করলেন, নতুন কিছু করে জবাবের মত জবাব দিতে হবে। নানা ভাবনা তখন মহেন্দ্রনাথের মাথায় ঘুরছে। কিন্তু মনের মত হচ্ছে না। একদিন রাস্তায় যেতে যেতে প্রকান্ড একটি লোহার রোলার দেখতে পান মহেন্দ্রনাথ। ঠিক করলেন, এই রোলারই বুকে তুলবেন। বিশাল সেই রোলার। ওজন ১৬২ মণ। যেমন কথা তেমন কাজ। সেই রাতেই কয়েকজন সহকর্মীর সাহায্যে রোলার বুকে তুললেন মহেন্দ্রনাথ। দেখে শুনে রামমূর্তিও তখন থ।

লোহার গোলা নিয়েও সার্কাসে খেলা দেখাতেন মহেন্দ্রনাথ। একমণ ওজনের লোহার গোলা চিবুকে রাখতেন, পাঁচমণ ওজনের গোলা উঁচুতে তুলে ধরে পিছনে ছুড়ে দিতেন। দুই হাতে ২৫ হর্সপাওয়ারের চলন্ত দুটি মোটরগাড়ি দড়ি দিয়ে টেনে রেখেও তাক লাগিয়ে দিতেন বাঙালি ব্যায়ামবীর মহেন্দ্রনাথ।

বুকের উপর পাথর তুলে সেখানে ‘রাধচক্রমানুষ ঘোরানোর খেলা দেখেও লোকে হাঁ হয়ে যেত। খেলাটা কেমন? বুকের উপর বিশ মন ওজনের পাথর রাখতেন মহেন্দ্রনাথ। সেই পাথরের উপর মোটা লাঠির মাথায় ‘রাধচক্রতৈরি করা হত। সেই চক্রে ৪-৫জনকে বেশ কয়েক মিনিট ঘোরাতেন ‘বীর’ মহেন্দ্রনাথ।

বাংলার ১৩৩৭ সালে মহেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। বাংলার এই ‘বীর’ মানতেন, ‘মিতাচারী ও মিতাহারী না হলে শক্তি সঞ্চয় অসম্ভব’।

ও হ্যাঁ, পরেশনাথ, মহেন্দ্রনাথ ছাড়াও আরেক বাঙালি ‘বীর’ প্রোফেসর রামমূর্তির উপর চটেছিলেন। এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা বাংলা থেকে অন্তত একশ রামমূর্তি তৈরি করব’। সেই বঙ্গবীরের নাম রাজেন ঠাকুরতা। সেই বীর-কাহিনি আরেকদিন।

©bengalism.com

Related posts

Leave a Reply

%d bloggers like this: